রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ফজলে হোসেন বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বে অবহেলায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ইন্টার্ন ডাক্তার কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের করা এক মানববন্ধনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এসময় রামেকের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে নয় দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের পক্ষে নয় দফা দাবি পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী শফিউল আজম রবিন।

দাবিগুলো হলো- শাহরিয়ারের মৃতদেহের পাশে অবস্থানকালে তার সহপাঠীদের ওপরে নৃশংস হামলা, হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং আনসারদের অতিদ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং প্রত্যেকদের তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে; রামেকের ডিরেক্টর শামীম ইয়াজদানীর অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনাটি ঘটে। এই পরিচালকের অপসারণন করতে হবে; রামেকের অব্যবস্থাপনা ও জরুরী মুহুর্তে ফর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সাথে যোগসাজস বন্ধ করতে হবে; রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডাক্তারদের দোর্ষ ওয়ার্ডবয়দের ওপর, ওয়ার্ডবয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেবার সংস্কৃতি আর চলবে না; এমপি বাদশার বেসামাল, অনাকাংক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।

বাকি দাবিগুলো, ইন্টার্ন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অভিযোগ জানাতে গেলে অভিভাবকদের উপর অস্ত্রোপাচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমনের বদোভ্যাস পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি মানবিক ও আন্তরিক হতে হবে; জরুরী বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে জরুরী চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ডাক্তারদের দায়িত্ব চলাকালীন সময়ে নার্স কিংবা ওয়ার্ডবয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়ানো চলবে না; আইসিউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সিগনেচারের নামে টালবাহানা করে যে কালক্ষেপন করা হল তা দ্বিতীয় কারও সাথে করা হবে না, এই নিশ্চয়তা দিতে হবে; অনতিবিলম্বে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে। রামেকের ডাক্তার-নার্সরা মনগড়া, বানোয়াট, কাল্পনিক, অসত্য যে ঘটনা সাজিয়েছে তার চিত্র প্রকাশ করে সবাইকে প্রকৃত সত্য ঘটনা জানার সুযোগ করে দিতে হবে।

শফিউল আজম রবিন বলেন, রামেকের ডাক্তারদের দায়িত্ব অবহেলা ও সিদ্ধান্তহীনতায় শাহরিয়ার প্রাণ হারায়। শোকের সময় আমরা বর্বরোচিত হামলার শিকার হই। মেডিক্যালে তারা মিথ্যা মামলা ও হয়রানিমূলক কথা বলে। যেই হাত দিয়ে শাহরিয়ারের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করার কথা ছিল, সেই হাত দিয়ে মাইক ধরতে হচ্ছে, মানববন্ধন করতে হচ্ছে। রামেকের এই বর্বরোচিত আচরণ নতুন কিছু না। তারা অনেক আগে থেকেই এমন করে আসছে।

রাজশাহী-২ আসনের সাংসদ ফজলে হাসান বাদশার উস্কানিমূলক বক্তব্যেও নিন্দা জানিয়ে রবিন আরও বলেন, বাদশা সাহেব, আপনার ন্যাক্যারজনক, বেসামাল বক্তব্য আমাদের আগুনে ঘি ঠেলে দিয়েছে। আপনারা আমার ভাইদের হত্যা করতে চেয়েছেন। ক্ষমতা, কাগজের কিছু টাকার লোভে আপনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আপনি জোহা স্যারের ক্যাম্পাসে ঢোকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আজ আমরা বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।

মানববন্ধনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আজ শাহরিয়ারকে আমাদের মাঝ থেকে চলে যেতে হতো না যদি চিকিৎকরা তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করত। সেদিন হাসপাতালে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমাদের কোনো শিক্ষার্থী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। আন্দোলন করার সময় আমাদের আশ^াস দেওয়া হয়েছিল, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সঠিক বিচার দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আমাদের ৩০০ জনকে মামলা দিয়েছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। বাদশা যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে আমরা ব্যাথিত হয়েছি। তার বক্তব্যর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

দাবিগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘শাহরিয়ারের মৃত্যুর দিন যখন আমি নিজে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ জানাতে যাই তখন তিনি আসিইউ পাওয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলেন। একজন রোগীর যখন সিরিয়াস অবস্থা সেসময় কেনো এত ফরমালিটি মেইনটেইন করতে হবে। সার্বিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থন করছি।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রেজা, শুভ্র রানী চন্দ, সায়েম প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবাদী কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় রামেকে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রামেকে নেওয়ার ৩৫ মিনিট পর বিনা চিকিৎসায় আহত শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে মেডিক্যালে রাবি শিক্ষার্থীরা আন্দেলন করলে সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডবয়রা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মানববন্ধনে বাদশা রাবি শিক্ষার্থীদের সন্ত্রাসী বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।